প্রিয় বাবা, তোমার মতো হতে ইচ্ছে করে!
কিন্তু পারিনি, পারবোনা তাও জানি।
আমি এখন নিয়মিত কোর্টে যাই, সন্ধায় চেম্বারে বসি,
এখন আমি আর আড্ডায় যাইনা, দেরী করে ঘরে ফিরিনা, অর্থের অপচয় করিনা।
এখন টের পাই চেতনে-অবচেতনে, তুমি আমায় নিয়ে কেন এত দুশ্চিন্তা করতে।
আমি যখন বাড়ী থেকে পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলাম, পরে জেনেছি তুমি রাতের পর রাত বারান্দায় বসে আমার ফিরবার পথ চেয়ে থাকতে আর নিরবে চোখের জলে আমার নাম ধরে ডাকতে।
আমি বুঝিনি বাবা তখন, আজ বুঝেও তোমায় জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে পারিনা।
প্রতিদিন কোর্টে আমি তোমার গাউন পরি, ভাবি তুমি যেন আমায় জড়িয়ে আছো। জানি তুমি কোর্টে নেই, তারপরও আমার বিহ্বল দুচোখ অজান্তে তোমায় খোঁজে ফেরে। এখন কোন মামলায় জিতলে কেউ আমার পীঠ চাপড়ে বাহবা দেয় না, তুমি যেমন দিতে।
বড় কোন মামলায় মুভ করার আগে কেউ বলে না তুই পারবি বলে সাহস জোগায় না।
কোন কবিতা পাঠের আসরে আমি কবিতা পড়ার সময় সামনে সারিতে তোমার সেই চমকে দেওয়া উপস্থিতি, উৎসাহ এখন শুধু জ্বলজ্বলে স্মৃতি, তাই আর কোথাও কবিতা পড়তে গেলে শব্দগুলো কান্নার মত শোনায়, তাই আর যাই না।
আমার প্রথম প্রকশিত কাব্যগ্রন্থ হাতে পেয়ে তোমার সেই আলোকিত মুখ এখনও মনে পড়ে।
বাবা, ও বাবা তুমি কেমন আছো, তোমায় খুব মনে পড়ছে। আমি শুধু তোমায় কষ্ট দিয়েছি, তারপরও তুমি বুকে টেনে নিয়েছো বারবার। অনেকে শুনে অবাক হয় ছোট বেলা থেকে ল'পড়ার সময়ও তোমার কোলে ঘুমাতাম। আহ্ কি শান্তির সে ঘুম! এখনও দু-চোখে বুজলে দেখতে পাই তোমার কেনো আঙুল ধরে কমলা রঙের সুটকেস হাতে স্কুলে যাচ্ছি ...
বাবা ভীষন কান্না পাচ্ছে,
তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ নায়ক ছিলে আজও আছো, চিরকাল থাকবে।
সাঁইজী বলেছিলেন, " পিতার বীর্যে পুত্রের জনম, তাইতো পিতার পুণর্জনম"।
আমি কি পারবো বাবা তোমার মতো না হতে পারলেও তোমার কাছাকাছি হতে।
প্রতিদিনই তোমার কবরের পাশ দিয়ে কোর্টে যাই আর ভাবি তুমি দেখছো, সাহস দিচ্ছো আগের মতন। আর তখনই কোথা হতে চোখে পোকা পড়ে, এই এখন যেমন পড়লো।
বাবা, তোমাকে চিঠি লিখিনি কখনও, আজ না লিখে পারলাম না, জানি উত্তর আসবে না, তুমিও ফিরবে না।
আমায় ক্ষমা করে দিও, আমি পারিনি তোমার মতো হতে।
তুমি ভালো থেকো, আমি ভালো আছি। তোমাকে ছাড়া আর কতটুকুই বা ভালো থাকা যায়। আজ খুব ইচ্ছে করছে তোমার মুখে শুনতে," আমার পাগলা"।
আর লিখতে পারছি না যে, বাবা।
ইতি
তোমার পাগলা
২৮/১০/১৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন